পৃষ্ঠাসমূহ

Tuesday, August 15, 2017

ভারতের মুসলমান

তবু ভারতে জায়গা হচ্ছে না কেন? কোন রেনেসাঁস হলে এদেশে মুসলমান বাঁচে, আনিসুজ্জামান কি বলতে পারেন?


৪ আগস্ট বাংলাদেশের ইত্তেফাকে একটি উপসম্পাদকীয় ছাপা হয়েছে। যার লেখক ভারতের প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক আবুল বাশার। এই লেখায় এমন কিছু বেদনা আমরা লক্ষ্য করি যা চিন্তাশীল মানুষের জন্য ভাবনার বিষয় বটে! তিনি বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী আনিসুজ্জামানের কাছে একটা ছোট্ট প্রশ্ন রেখেছেন সর্বশেষে। পাঠক আপনারাও লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন। আমি আগের পোস্টে শেয়ার করেছি। এখানে চুম্বক অংশ তুলে ধরলাম।... আমার মূল্যায়ন এ রকম—পাকিস্তানে মুসলমান একটি জাতি। বাংলাদেশে মুসলমান একটি সম্প্রদায়। ভারতবর্ষে মুসলমান একটি বর্ণ মাত্র—নিম্নবর্ণ। কারণ মুসলমান এখানে নিম্নবর্ণ থেকেই ধর্মান্তরিত হয়েছে। নিম্নবর্ণ থেকে বৌদ্ধ হয়ে তারপর মুসলমান হয়েছে—এমনও হয়েছে। বাংলাদেশে তার নিম্নবর্ণত্ব ঘুচে গেছে ভাষাজাতি হিসেবে নিম্নসত্তার ধর্মনিরপেক্ষ উত্তরণে; সে হয়ে উঠেছে যথার্থ বাঙালি, তার সঙ্গে মিশে আছে হিন্দু সম্প্রদায়েরও সমান উত্তরণ; ভাষা-প্রত্যয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য জাগরণ (রেনেসাঁস)। এ জিনিস ভারতবর্ষে লক্ষ লক্ষ বছরেও হবে না কারো—কোনো বর্ণ বা সম্প্রদায়ের—দলিতের বা মুসলমানের। ভারতবর্ষে যথার্থ রেনেসাঁস আসতে হলেও বর্ণবাদের অনড় জগদ্দল সরাতে হবে—এ কাজে কোনো কারো স্পৃহা দেখা যায় না।
অথচ ভারতবর্ষে অন্য চর্চাও তো ছিল; ধর্ম-সমন্বয়ের এক দীর্ঘ ঐতিহ্য তো ছিল; বাঙালি হিন্দুর মুখে বহুত্ববাদের গালভরা মননশীল চমক ছিল, ধর্মবেত্তা ঠাকুরের মুখে ছিল ‘যত মত তত পথ’—বাণী। সবকে চমকে দিয়েছে নতুন এক হিন্দুযুগ শুরু হয়েছে ভারতবর্ষে। বল্লাল সেনের হিন্দুত্ব এই সুপ্রাচীন নবত্বে ভরা হিন্দুত্বের কাছে নস্যি মাত্র।
অথচ হিন্দু ও মুসলমান এখনও আমরা একসঙ্গে রয়েছি। যদিও ভারতের মুসলমান প্রকৃত প্রস্তাবে আদিবাসীদের চেয়েও গরিব, অসহায়, নিরাপত্তাহীন।
আমি একজন নিম্নবর্ণেরই লোক। আমার দাদা সাহেব (ঠাকুরদা)’র নাম সুবরাতি মন্ডল। তার বাবার নাম গোলাপ মন্ডল। আমার বাবার নাম কলিমউদ্দিন আহমেদ (মন্ডল)। আমার পদবি আসলে মন্ডল; নিম্নবর্ণের মন্ডল। ভারতবর্ষে মুসলমানের চাকরি (সরকারি) তিন শতাংশেরও কম। পশ্চিমবঙ্গে পাঁচ শতাংশ—উচ্চপদে কোনো চাকরি নেই। রেলে চার শতাংশ—অত্যন্ত নীচু পদে নিযুক্ত।
মোদীভাই কলকাতার জনসভায় প্রকাশ্যেই বলে গেছেন, যারা দুর্গাপূর্জা করেন সেই সব হিন্দুর জন্য ভারতের দরজা উন্মুক্ত রয়েছে।
কিন্তু ভারতবর্ষে, বিশেষ এই বাংলায় মুসলমানের উদ্যোগেও তো দুর্গাপূজা হয়। মুর্শিদাবাদের লোক আমি, সেখানে পূজা কমিটির সম্পাদক-সভাপতি মুসলমান; কলকাতায় নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম একাই একটি দুর্গাপূজার আয়োজন করেন। দিন পনের আগে খুঁটি পূজা হলো এক জায়গায়, এই কলকাতার বুকে—উদ্বোধক ফিরহাদ; তত্সহ আমিও ছিলাম। আমার লেখা ‘জমিজিরেত’ নামে একটি ছোটগল্প প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ-তে পাঠ্য—তার নায়ক একজন শিব-উপাসক মুসলমান—কাশ্মিরের যে ইসলাম, তা আসলে শৈব ইসলাম। আমরা শিব-কৃষ্ণের উপাদান ইসলামে নিয়েছি। তবু ভারতে জায়গা হচ্ছে না কেন? কোন রেনেসাঁস হলে এদেশে মুসলমান বাঁচে, আনিসুজ্জামান কি বলতে পারেন?
কপি: Mohiuddin Mohammad

No comments:

Post a Comment